বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাসের মহামারির ছোবল থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ে দিন আনে খায় এমন মানুষ। খাবার সংকট দেখা এই সকল অসহায় মানুষদের ঘরে। মৃত্যু ভয়ে দায়িত্বশীল অনেকেই হাত-পা গুটিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। তবে করোনার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জীবনবাজী রেখে অনেকেই আবার মাঠে থেকে ‘করোনাযোদ্ধা’ খেতাপও পেয়েছেন। ভুলে গেছেন নিজের পরিবারের কথা। সার্বক্ষনিক অসহায়, দু:স্থ মানুষের পাশে থাকার প্রাণপন চেষ্টা ছিল তাদের। এমনই একজন পুলিশ কর্মকর্তা হলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচাজ (ওসি) কামরুল ফারুক। করোনার প্রার্দুভাবের শুরু থেকে তার কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে সর্বত্র। এতে করে প্রশাসনিক দায়িত্বের বাইরে গিয়ে একজন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তার ভুমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি। অসহায় মানুষকে কখনো ডেকে এনে আবার কখনো রাতের আধারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের উদ্যোগে উপহার সামগ্রী (খাদ্য দ্রব্য) পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। বাদ যায়নি এতিম, প্রতিবন্ধী, হিজড়া, মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন ও শিক্ষকরাও। এছাড়া ম্যাসেজ ও ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অনেককেই উপহার সামগ্রী পৌছে দিয়েছেন তিনি। সহযোগিতা করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইনের অনেক সংবাদকর্মীদের।
এছাড়া শুরুর দিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন করতে পুরো থানা এলাকায় হ্যান্ডবিল বিতরণ ও মাইকিং করিয়েছেন তিনি। এবং করোনার ঝুঁকি এড়াতে থানার মুল ফটকে বেসিনসহ সাবানের ব্যবস্থা করেছেন। থানায় প্রবেশের আগেই যেন সকলেই ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে পারে। এছাড়াও তার নেতৃত্বে কারোনা সচেতনতায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন থানার বিশেষ টিম। যারা পাড়া মহল্লায় সরকারের নির্দেশ মেনে সকলকে সচেতন হয়ে-বাসায় থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া সকল প্রকার সেবামূলক কাজে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে তারা। সিদ্ধিরগঞ্জ কার্যালয়ের আশপাশ জীবাণুমুক্ত রাখতে সকাল-বিকাল জীবাণুনাশক পানি ছিটিয়েছেন ওসি কামরুল ফারুক।
এখানেই শেষ নয় পুলিশ যাতে স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারে এজন্য সকল সদস্যদের মাঝে একধিকবার সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, গøাভস ও পিপিই বিতরণ করেছেন। এক পর্যায়ে করোনা বিস্তার রোধে কাজ করতে যেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১৬ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারা সুস্থ হওয়ার পর আবারও নব উদ্যমে কাজের উৎসাহ যোগাতে তাদেরকে ২৩ মে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
মোটকথা করোনা পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত তিন মাসে পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি বারের জন্যও দেখা করতে যেতে পারেননি তিনি। এমনকি ঈদের দিনও না। ৫ম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার ছেলে রাইয়ান ফারুক লামীমের আবদার ছিলো একবারের জন্য হলেও বাবার সাথে সাক্ষাতের। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে সন্তানের সেই আবদার রক্ষা করতে পারেননি।
ওসি কামরুল ফারুক বলেন, আসলে মানুষ হিসেবে আমাদের সবারই উচিৎ দুর্যোগময় মুহুর্তে সাধ্যমত অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। তাই আমি চেষ্টা করেছি এবং করছি সাধ্যমত অসহায় মানুষকে সহায়তা করার জন্য। তিনি আরও বলেন ‘পুরো বিশ্বে করোনা একটি মহামারি অসুখ। ছোঁয়াচে এ রোগে আমাদের দেশের জনগণও আক্রান্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে। সেই মহামারি থেকে সিদ্ধিরগঞ্জবাসীকে দূরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি ও ডিআইজি মহোদয়ের নির্দেশক্রমে এবং বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সাধ্যানুযায়ী সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর জন্য কাজ করে যাচ্ছি, করে যাবো।’ ইনশাআল্লাহ।