ট্রাফিক পুলিশের পোশাক পরিধান করে একটি মাইক্রোবাস ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় এক ভূয়া পুলিশ সার্জেন্টকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোর্পদ করা হয়েছে। আটককৃত ছিনতাইকারীর নাম শাহিন ওরফে শামীম। সে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর খেয়াঘাট এলাকার মহসিন আলীর ছেলে। শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের ভুইগড় এলাকায় থেকে তাকে আটক করা হয়। আটককৃত ওই ছিনতাইকারীর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আসল পিস্তলের সাদৃশ ৩টি লাইটার পিস্তল, দু’টি ওয়াকিটকি এবং ট্রাফিক পুলিশের এক সেট পোশাক। আটক শামীমের হেফাজত থেকে ২টি মেট্রো পলিটন পুলিশ কালারের জ্যাকেট, যার একটির মধ্যে সার্জেন্ট র্যা ঙ্ক ব্যাজ ও শাহিন নামে নেইম প্লেট লাগানো এবং অপরটিতে লতিফ নামে নেইম প্লেট লাগানো আছে,৩টি পিস্তল সদৃশ্য গ্যাস লাইট,১টি ওয়াকিটকি সেট, ১টি ওয়াকিটকি কন্ট্রোলার,১টি চামড়ার পিস্তলের কভার,১টি চামড়ার হ্যান্ডকাপের কভার,পুলিশের মনোগ্রাম সংযুক্ত ১টি ক্যাপ, ১টি সিগনাল লাইট,১টি পুলিশে মনোগ্রাম সংযুক্ত কোমরের বেল্ট উদ্ধার করা হয়।
ছিনতাই চেষ্টা থেকে রক্ষা পাওয়া নোয়া মাইক্রোবাসের (ঢাকা মেট্টো-গ-৩৭-৯০৫০) চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোডের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট ষ্ট্রেডিয়ামের সামনে ট্রাফিক পুলিশের পোশাক পরিহিত ২ জনসহ মোট ৪ জন লোক গাড়ি থামাতে আমাকে সিগন্যাল দেয়। আমি গাড়ি থামাতেই ট্রাফিক পুলিশের পোশাক পরিহিত সার্জেন্ট পদমর্যাদার একজন গাড়ির কাগজপত্র চায়। তাৎক্ষনিক কাগজপত্র দিলেও তারা বলে এসব কাগজে ভুল আছে, তোমাকে থানায় যেতে হবে। এরপর তারা আমাকে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে থানার দিকে না গিয়ে গাড়ি চালিয়ে ঢাকার দিকে রওনা দেয়। তখন আমার সন্দেহ হলে আমি চিৎকার দেই। এতে গাড়িটি আরও দ্রুত গতিতে চালিয়ে ভূঁইগড় বাসষ্ট্যান্ডে এসে সিগন্যালে আটকে থাকা একটি পিকআপ ভ্যানের পিছনে লাগিয়ে দেয়। এতে গাড়িটির সামনের অংশ ধুমড়ে মুচড়ে যায়। তখন আবারও চিৎকার করলে গাড়ি থেকে দ্রুত তিনজন পালিয়ে যায় এবং আশপাশের লোকজন এসে একজনকে আটক করে গণধোলাই দেয়।
এদিকে জেলা পুলিশ এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ফতুল্লার লালখাঁ পূর্ব শেয়াচর এলাকার আব্দুল্লা আল নোমান (২৩) তার ড্রাইভার দেলোয়ার হোসেন ঢাকা মেট্রো গ-৩৭-৯০৫০ গাড়ী যোগে ঢাকাস্থ ধানমন্ডি যাওয়ার পথে বেলা পৌনে ৩টার দিকে ফতুল্লার লামাপাড়াস্থ নম পার্কের পশ্চিম পাশের্^ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোডর্ গামী রাস্তার উপর ৪ জন ব্যক্তি তাদের গাড়ী সিগনাল দেয়। এরমধ্যে জন পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিল। গাড়ীটি থামালে ৪ জন ব্যক্তি গাড়ীর কাগজপত্র দেখার কথা বলে জোর পূর্বক উক্ত গাড়ীতে উঠে গাড়ীর ড্রাইভার মোঃ দেলোয়ার হোসেন’কে পিছনের সিটে বসিয়ে ৪ জনের মধ্যে ১ জন উক্ত গাড়ীটি চালিয়ে সাইনবোর্ডের দিকে যেতে থাকে। পথিমধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান ও ড্রাইভার মোঃ দেলোয়ার হোসেন বুঝতে পারে যে, ৪ জন ব্যক্তি ভূয়া পুলিশ। তখন তাদের সাথে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অনুমান ভূইগড় বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌছালে একটি কভার্ড ভ্যানের সাথে গাড়ীটি দূর্ঘটনায় পতিত হয়। তখন আব্দুল্লাহ আল নোমান ও ড্রাইভার মোঃ দেলোয়ার হোসেনের ডাক চিৎকারে আশপাশের লোকজন ও উক্ত এলাকায় ফতুল্লা থানা পুলিশের মোবাইল-২২ ডিউটিরত এএসআই রঞ্জন ঠাকুর সঙ্গীয় ফোর্সসহ এগিয়ে এসে মোঃ শামীম (৩৬) কে আটক করে। এবং অপর ৩ জন পালিয়ে যায়।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, কৌশলে ছিনতাই করার জন্য তারা পুলিশের পোশাকা পড়েছিল। ছিনতাইকারীরা একটি সিএনজিযোগে ঘটনাস্থলে এসেছিল, যাতে কেউ সন্দেহ না করে। নোয়া চালকের বুদ্ধিমত্তায় ছিনতাই চেষ্টা সফল হয়নি। স্থানীয়দের সহায়তায় টহল পুলিশ ছিনতাইকারীদের কবলে পড়া নোহা মাইক্রোসহ চালক দেলোয়ারকে উদ্ধার করেছে। ওই সময় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টের পোশাক পরিহিত শাহিন নামে এক ভুয়া পুলিশ সার্জেন্টকে আটক করা হয়েছে। তার কোমর থেকে আসল পিস্তলের মতো দেখতে একটি খেলনা পিস্তল, একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। আর গাড়িটির ভেতর থেকে আটক শাহিনের ৩ সহযোগির ফেলে যাওয়া আরও এক সেট পুলিশের পোশাক, ২টি খেলনা পিস্তল এবং আরও একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়েছে।
আটককৃত শাহিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার সহযোগিদের বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।