এমওপি (মিউরেট অব পটাশ) সার আমদানি নিয়ে বাংলাদেশ-রাশিয়ার মাঝে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে মন্ত্রণালয় অফিস কক্ষে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজেন্ডার আই ইগন্যাটোভ। সেখানে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন- বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. সাইদুল ইসলাম এবং রাশিয়ার পক্ষে- বিদেশি অর্থনৈতিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক পোটাপোভ মিখাইল পেটরোভিস। চুক্তিতে রাশিয়া থেকে এক লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানি করা হবে। এর সঙ্গে আরও ৩০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত ধরা হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ-রাশিয়ার ৪৮ বছরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় থেকে রাশিয়া এ দেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তা বাংলাদেশের জনগণ চিরদিন মনে রাখবে। বাংলাদেশের আমদানিকৃত সারের সিংহভাগই আসে রাশিয়া থেকে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের বিদ্যুৎ খাতে রাশিয়া অনেক বিনিয়োগ করেছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে। কৃষি ও মৎস্য উন্নয়নের সহযোগিতা বৃদ্ধিতেও উভয় দেশ সম্মত হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শাক-সবজি চাষে রীতিমত বৈপ্লবিক অগ্রগতি হয়েছে।’ কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাত ও রফতানিতে রাশিয়ার সহযোগিতা চান তিনি। কৃষকের উৎপাদন খরচ হ্রাসের লক্ষ্যে সরকার ডিএপি সারের মূল্য কেজিতে ৯ টাকা করে কমিয়েছে বলে জানান তিনি।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্ক অনেক দিনের। দুই দেশের এ সম্পর্ক রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। রাশিয়া সরকার বাংলাদেশে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করছে। অন্য শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারেও রাশিয়া বিনিয়োগ করছে। আর ভবিষ্যতে দুই দেশের সুসম্পর্কের মাধ্যমে এসব বিনিয়োগ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে বলে।’
এদিকে, ব্রাউন ড্রাউট ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানিতে রাশিয়ার দেয়া সাময়িক নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দেশের উদ্বৃত্ত আলু রফতানির জন্য রাশিয়া সম্ভাবনাময় বাজার। বাংলাদেশের কৃষি বিভাগ আলু ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। কন্ট্রাক্ট গোরয়ার্সদের মাধ্যমে রফতানির জন্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে, ফলে এর মধ্যে ক্ষতিকর কোনো উপাদান থাকার আশঙ্কা কম। এছাড়া অ্যাক্রিডেটেড ল্যাব স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে রাশিয়া আবারও বাংলাদেশ থেকে আলুসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখায়।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘রাশিয়া যেসব দেশ হতে আলু আমদানি করে এর মধ্যে বাংলাদেশের আলুর মান ভালো। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন অণুজীবের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
এছাড়া বাংলাদেশ যেসব কৃষিজাত পণ্য রফতানি করতে চায় তার একটি তালিকাও চেয়েছেন রাষ্ট্রদূত। রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশেকে স্বাগত জানান তিনি।
রাশিয়ার প্রতিনিধি দলে ছিলেন- বৈদেশিক বাণিজ্য দফতরের প্রধান আলেকজেন্ডার মোসকালেংকো, জেনারেল ডিরেক্টর পোটাপোভ মিখাইল পেটরোভিস।