‘আমরা করব জয়, আমরা করব জয়, আমরা করব জয় নিশ্চয়, আহা বুকের গভীরে, আছে প্রত্যয় আমরা করব জয় নিশ্চয়’ গানের এই কথাগুলো সামনে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য চালু হলো ‘আমরা করব জয়’ কর্ণার’। এখানে শিশুদের জন্য খেলাধূলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা বারিক গতকাল সোমবার এই কর্ণারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
সদর উপজেলাধীন ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২১৫ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু রয়েছে। এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের খেলাধুলা এবং বিনোদনের উদ্দেশ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নারায়ণগঞ্জ সদর এর পরিকল্পনায় উপজেলা পরিষদে “আমরা করব জয়’ (Children with differently able,not disable) কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্র কে. এম. আসিফ রহমতঊল্লাহকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নারায়ণগঞ্জ সদর এর উদ্যোগে ১টি হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আরও ৫ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে হুইল চেয়ার এবং ১ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে ক্র্যাচ প্রদান করা হয় এবং উপস্থিত সকল শিশুদের শিক্ষা উপকরণ এবং তাদের অভিভাবকদের ‘পুষ্টি বার্তা’ বই এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে সুপারিশমালা’ বই বিতরণ করা হয় ।
এসময় নাহিদা বারিক বলেন, সদর উপজেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘আমরা করব জয়’ কর্ণারে এসে খেলাধুলা এবং বিনোদনের সুযোগ পাবে। এই উদ্যোগটি অভিনব এবং প্রত্যেকটি উপজেলার জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থাপিত উক্ত কর্ণারের মাধ্যমে শিশুরা খেলাধুলা, ব্যায়াম, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ পাবে। ‘আমরা করব জয়’ কর্ণারে টিভি, ট্রেড মিল, ব্যায়ামের সাইকেল, হারমোনিয়াম, তবলা, পাজল গেম, ইন্টারনেট, ব্লক গেম ইত্যাদি খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন প্রতিবন্ধিতার কারণে কোন শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রাখা যাবে না।
ইউএনও বলেন, সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে তা থেকে একেবারেই ভিন্ন ধরনের শিখন পদ্ধতি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে । চাপ দিয়ে শেখানো বা পড়তে বা বলতে বাধ্য করানো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সঙ্গে একেবারেই যায় না। সাধারণ শিশুদের বুঝিয়ে পড়ানোর যে সুযোগ থাকে বিশেষ শিশুদের ক্ষেত্রে সেটাও নেই। এসব শিশুর বেশিরভাগই আপন খেয়ালে থাকে। তাদের বেশিরভাগই সেনসরি জনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে, অন্য কারও সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময়ও (আই কন্টাক্ট) করতে পারে না। এমন শিশুদের কিভাবে কিছু শেখাবেন, খাওয়াবেন, কিছু বলবেন তা নিয়ে তাদের অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন থাকেন। কারণ, যথাযথ কৌশল না জানলে তাদের উন্নতি ঘটানো অত্যন্ত কঠিন।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সকল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থার জন্য একটি পার্ক নির্মাণের কার্যক্রম পরিকল্পনাধীন রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গৃহীত এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে এবং তারা পরিবারের বোঝা নয় বরং সম্পদে পরিণত হয়ে দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার হবে।
তিনি বলেন, অটিজম কোনো মানসিক রোগ নয়, মস্তিষ্কের একটি বিকাশ গত সমস্যা যেটা একটা শিশুর তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। অটিজম সমস্যায় আক্রান্তদের বলা হয় অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। অটিজম সম্পর্কে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে স্বাস্থ্য সচেতনতা তেমন নেই বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের প্রতি অভিভাবক ও সমাজ হয়ে ওঠে বৈরি। অনাদর অবহেলায় বড় হয়ে ওঠে তারা পরিণত হয় সমাজের বোঝা হিসেবে।