এক সপ্তাহ পরেই শুরু হচ্ছে ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা (ডিআইটিএফ)-২০২০। এবার মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের মূল্য বাড়ছে ১০ টাকা। গত বছর মেলায় প্রবেশের মূল্য ৩০ টাকা থাকলেও এবছর নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা।
ইতোমধ্যে মেলা প্রাঙ্গণের নির্মাণকাজ ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের বাণিজ্য মেলাকে দৃষ্টিনন্দন করতে স্মৃতিসৌধের আদলে তৈরি করা হচ্ছে মেলার মূল গেট। এর সঙ্গে থাকছে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং অর্থনৈতিক মুক্তি ও উন্নয়নের রোল মডেল শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সূত্রে এমন তথ্যই জানা গেছে।
ইপিবি’র মহাপরিচালক অভিজিৎ চৌধুরী বাংলা২৪ বিডি নিউজকে বলেন, এবার ২৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা ২০২০’র গেটের থিমে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে গুরুত্ব দিয়ে গেটের দুই পাশে জাতীয় স্মৃতিসৌধ রাখা হচ্ছে। কারণ বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন এবং তারই কন্যা শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও উন্নয়ন কাজের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য গেটের ওপরে পদ্মাসেতুর একটি স্প্যান বসবে। স্প্যানের ওপর ডিআইটিএফ’র লোগো থাকবে এবং লোগোর দুই পাশের একদিকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও আরেক দিকে শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি হবে। আমাদের মূল থিমই হচ্ছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এনেছে আমাদের স্বাধীনতা আর দেশরত্ন শেখ হাসিনা এনেছে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি।
তিনি বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ে মেলার কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। ইতোমধ্যে মেলা প্রাঙ্গণের নির্মাণকাজ প্রায় ৮০ শতাংশ হয়ে গেছে। পূর্বাচলের স্থায়ী জায়গা প্রস্তুত না হওয়ায় এবারও আগারগাঁওয়ে মেলা হচ্ছে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবেনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাণিজ্যমেলাকে আরও দৃষ্টিনন্দন করতে মূল গেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ছোঁয়া থাকবে। এবারই প্রথম মেলার মূল গেট ও বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। গতবারের মতো এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজনসহ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন থিম থাকবে।
অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, আমরা আশা করছি এবারের মেলা অনেক খোলামেলা ও প্রাণবন্ত হবে। মেলাতে দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটাসহ বাচ্চাদের বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে। এবারের মেলার রাস্তাগুলো আগের থেকে অনেক বেশি প্রশস্ত করা হয়েছে। এবারের মেলার প্রবেশমূল্য গতবারের চেয়ে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আগে সেটি ছিল ৩০ টাকা। এবছর ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকাই রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, খাবারের নিরাপত্তার জন্য এবারও খাবারের মান ও দামের বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মেলাতে পর্যাপ্ত মোবাইল কোর্ট থাকবে। ভোক্তা অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসক ও আমাদের (ইপিবি) নিজস্ব মোবাইল কোর্টসহ মোট চারটি মোবাইল কোর্ট মাঠের সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে থাকবে। মেলাতে ধুলোবালি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ হকার এবং ভিক্ষুকদের উৎপাত কমানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এজন্য সিটি করপোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা দুই-তিনবার পানি ছিটাবে। এলক্ষ্যে পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে কোনো সমস্যা না হয়। প্রতি দুইটা টয়লেটের জন্য একজন করে লোক সার্বক্ষণিক দাঁড়ানো থাকবে। যাতে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করা যেতে পারে।
মহাপরিচালক বলেন, ২৫তম বাণিজ্যমেলায় স্টলের সংখ্যা কমেছে। এখন পর্যন্ত মেলায় প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৪৫০টি। গত বছর ছিল ৫৫০টি। সবচেয়ে বেশি কমেছে সাধারণ স্টল। গত বছর আমাদের ২৫০টি সাধারণ স্টল থাকলেও এবছর সেখানে ৫০টি স্টল করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ২৩৩টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি ২৭টি প্যাভিলিয়নের ৫৫টি বরাদ্ধ হয়ে গেছে। এখনও যাচাই-বাছাই চলছে। এ পর্যন্ত সোনালী, জনতা, ডাচ বাংলা, ইসলামী ব্যাংকসহ চারটি ব্যাংকের বুথ ও ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো হবে বলে ঠিক হয়েছে।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, এবারের মেলায় বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভোক্তা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে চারটি টিম সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। নিরাপত্তার জন্য র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে থাকছে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যমেরা। মেলার দুই প্রান্তে দুইটি শিশু পার্ক, দুইটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, একটি ইকো পার্ক, একটি মা ও শিশু কেন্দ্র, একটি বঙ্গবন্ধু প্যাভেলিয়ন এবং একটি ইপিবির তথ্য সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। থাকছে ডিজিটাল এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার (ডিজিটাল টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি), যার মাধ্যমে ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা নির্দিষ্ট স্টল ও প্যাভিলিয়ন অতি সহজে খুঁজে বের করতে পারবেন।
এছাড়াও থাকছে পর্যাপ্ত এটিএম বুথ, রেডিমেড গার্মেন্টস পণ্য, হোমটেক্স, ফেব্রিকস পণ্য, হস্তশিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহস্থালি ও উপহারসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আরও থাকছে তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক পলিমার পণ্য, কসমেটিকস হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারি, নির্মাণ সামগ্রী এবং ফার্নিচার সামগ্রী।
মেলার ৪৫০টি স্টলের মধ্যে- প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ৬১টি, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন ৪৭টি, সাধারণ প্যাভিলিয়ন ১০টি, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন ৮৫টি, প্রিমিয়ার স্টল ৮৪টি, রেস্টুরেন্ট ২টি, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন ৮টি, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন ৬টি, বিদেশি প্যাভিলিয়ন ২৭টি, বিদেশি মিনি প্যাভিলিয়ন ১১টি, বিদেশি প্রিমিয়ার স্টল ১৭টি, স্ন্যাকস বুথ ৮টি ও ফুড স্টল ৩৫টি।
এছাড়া সাধারণ স্টল ৫০টির মধ্যে নারীদের জন্য রয়েছে ২০টি স্টল। বাংলাদেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ২৩টি দেশের বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। এরমধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভুটান, নেপাল, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, জাপান, ইতালি, দুবাই, ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ব্রাজিল, ফিলিপিন, রাশিয়া, জার্মানি, তাইওয়ান ও হংকং।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনু্যায়ী, মাসব্যাপী অনুষ্ঠেয় এই মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেলার গেট ও বিভিন্ন স্টল প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। গতবারের মতো এবারও মেলার টিকিট অনলাইনে পাওয়া যাবে।
প্রতি বছরের মতো এবারও বাণিজ্য মেলার আয়োজনে যৌথভাবে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।