আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নারী-শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে তিনি ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ মন্তব্য করেন।
নিপুন রায় চৌধুরী বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে গাড়ি থেকে নেমেই ধর্ষণের শিকার হতে হলো। এখানে সবচেয়ে বড় কথা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা যারা প্রশাসনে দায়িত্বরত আছেন তারা এর আগে যে কেসগুলো হয়েছে সেখানে যথাযথ ভূমিকা রাখেনি। পাশাপাশি এত গুম-খুনের প্রতিবাদে বাংলাদেশের মানুষ সোচ্চার হচ্ছে না। ফলে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। তারই একটি ধারাবাহিকতা গতকালের ঘটনাটি।’
তিনি বলেন, ‘ভিকটিম শিক্ষার্থী মানসিকভাবে খুবই বিপদগ্রস্ত। তাই আমি ভেতরে তার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। শারীরিকভাবে তার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতের চিহ্ন যেটা চোখে না দেখে বিশ্লেষণ করা সম্ভব না। তার মা একজন শিক্ষিকা। তার মাও মেয়ের এ অবস্থায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।’
আপনারা কোনো সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এসেছেন, নাকি বিএনপির পক্ষ থেকে এসেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নিপুন রায় বলেন, ‘নারী-শিশু অধিকার ফোরাম যদিও একটি সামাজিক সংগঠন তবে আমাদের এই সংগঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা তারেক রহমান। তাই আমি তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে বলতে চাই, আপনারা সচেতন হোন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখুন এবং এ সরকার যেন অন্যায়কারীদের সুযোগ করে দিতে না পারে সেজন্য মাঠে থাকতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে গণতন্ত্র যেমন পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবে পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের সঠিক কাজটা পালন করবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ হচ্ছে, বিরোধী দলকে নিপীড়ন করা। আজকে সারা দেশে কত ধরনের অকারেন্স ঘটে যাচ্ছে সেখানে তাদের কোনো তৎপরতা আমরা দেখছি না। সেভাবে যদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতো, প্রতিটা ক্রাইমের যদি তদন্ত করে বিচারের আওতায় নেয়া হতো তাহলে কিন্তু এরকম ঘটনা আর ঘটত না।’
এই ঘটনার জন্য আপনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে নিপুন রায় চৌধুরী বলেন, ‘এখানে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা না, পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থার ব্যর্থতা রয়েছে। যেখানে রাষ্ট্র কাঠামো দুর্বল হয়ে যায়, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা বলা যাবে না।’
এর আগে ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে দেখতে যান নারী শিশু অধিকার ফোরামের প্রতিনিধিদল। পরে হাসপাতালের পরিচালকের অনুমতি সাপেক্ষে নিপুন রায় চৌধুরী ওই শিক্ষার্থী ও তার মায়ের সঙ্গে দেখা করেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর তাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রী। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ঢাবির নিজস্ব বাসে রওনা দেন তিনি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে বাস থেকে নামেন।