করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সফলতার দ্বারপ্রান্তে সিঙ্গাপুর। শুরু থেকে তাদের কার্যকরী পদক্ষেপের কারণেই দেশটি করোনা মোকাবিলায় সফল হতে পেরেছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় ট্রাস্কফোর্স গঠন করে সঠিক কর্মপন্থা নির্ধারণ ও সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের ফলেই এই সফলতা।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সিঙ্গাপুরে এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৬৫৫ জন করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৩ হাজার ৪৭৭ জন। আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২৭ জন। বর্তমানে কেউ আইসিইউতে নেই।
১। শুরুতেই চীনফেরতদের ১৪ দিনের লিভ অব অ্যাবসেন্সে পাঠানো হয়। এই ১৪ দিন তারা বাসায় থাকবে। তাদেরকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি ১৪ দিনের মধ্যে শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা না যায় তবেই কাজে যেতে পারবে।
২। প্রতিটি বাস, ট্রেন, ট্যাক্সি এমনকি শপিংমলের সিঁড়ি, লিফট ক্যামিকেল স্প্রে করে ভাইরাসমুক্ত করা হয়।
৩। স্থানীয় ও অভিবাসী প্রত্যেকের দৈনিক ২ বার শরীরের তাপমাত্রা চেক করা হয়।
৪। কারো সর্দি, কাশি, জ্বর অর্থাৎ ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নিশ্চিত হলে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা করা হয়।
৫। কোনো এক গ্রুপের একজন বা কোনো বাসার কারো শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেলে সে পরিবার বা গ্রুপের সবাইকে আলাদাভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যাতে করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারে।
৬। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সরকারি খরচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
৭। কনস্ট্রাক ট্রেসের জন্য ট্রেস টুগেদার নামে একটি অ্যাপ চালু করে দেশটির সরকার। যার মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি কারো সংস্পর্শে গেলে খুব সহজেই চিহ্নিত করে করে তাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।
৮। বিদেশফেরতদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের স্টে হোম নোটিশ দেওয়া হয় এবং বাস্তবায়নও করা হয়।
৯। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক পোস্ট আপডেট দেওয়া হয়।
১০। ডরমেটরিগুলোতে যাতে ব্যাপকহারে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য তারা ঝুকিপূর্ণ ডরমেটরিগুলোকে আইসোলেশন ঘোষণা করে।
১১। ডরমেটরিতে অবস্থানরত শ্রমিকদের জন্য ফ্রি খাবার, ইন্টারনেট, চিকিৎসা সেবা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।
১২। ডরমেটরিগুলোতে অস্থায়ী মেডিকেল বুথ স্থাপন করা হয়। যেখানে অভিবাসীকর্মীরা চিকিৎসা সেবা নিতে পারে।
১৩। কনস্ট্রাকশন সেক্টরে কর্মরত সকল শ্রমিককে স্টে হোম নোটিশ দেওয়া হয়।
১৪। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের চিকিৎসা সুবিধার জন্য এক্সপো, জাহাজ, আর্মি ক্যাম্প, হোটেল ও HDB ফ্লাটে অস্থায়ী বাসস্থান করা হয়। সেখানে শারীরিকভাবে সুস্থ তাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়।
১৫। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়।
১৬। নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়।
১৭। অভিবাসী কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়ার আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়।
১৮। প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য তিনটি অ্যাপ ডাউনলোড করা বাধ্যতামূলক করা হয়।
১৯। ডরমেটরিগুলো করোনাভাইরাসমুক্ত করার প্রতি জোর দেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুর সরকার, বেসরকারি এনজিও, জনগণ ও রাজনৈতিক নেতারা একসাথে কাজ করার কারণেই তারা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সফল হয়েছে।