মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণকালীন সময়ে বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের সামলানোর মতো যোগ্য মুখপাত্র বা মিডিয়া উইং নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে। এখন নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনের আয়োজন করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর বাইরে মহামারির এ সময়ে করোনা চিকিৎসাসেবাকে কেন্দ্র করে নানা অনিয়ম, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও অধিকাংশ সময় তারা গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের তীর্ষক প্রশ্ন ও তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কিত সন্তোষজক জবাব দিতে অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসার কথা থাকলেও তারা মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন। তাদের বদলে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কর্মকর্তাদের মিডিয়ার সামনে কথা বলতে বলে দায় সারছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলা২৪ বিডি নিউজকে বলেন, বর্তমান মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম সামলাতে যোগ্য মুখপাত্র অর্থাৎ শক্তিশালী মিডিয়া উইংয়ের চরম অভাববোধ করছেন তারা।
তারা বলছেন, দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার চিকিৎসক-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তারপরও তাদের কষ্টের কথা গণমাধ্যমে সঠিকভাবে তুলে ধরা হচ্ছে না। শক্তিশালী মিডিয়া উইং থাকলে তাদের মাধ্যমে ইতিবাচক উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ পেলে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো বলে তারা মন্তব্য করেন।
পরিচালক পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নতুন ধরনের এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নমুনা পরীক্ষার জন্য কিট সংগ্রহের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরি প্রস্তুত করা, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপন, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল প্রস্তুত করা, চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, তাদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সংগ্রহ ইত্যাদি সামলাতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তাদের। কিন্তু এসব পরিশ্রমের সঠিক প্রতিফলন গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্য শক্তিশালী মিডিয়া উইং না থাকায় নেতিবাচক দিকই অতিমাত্রায় উঠে আসছে।
গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, করোনা মহামারি শুরুর কয়েকদিন পর থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সরাসরি প্রেস বিফ্রিং বন্ধ রয়েছে। ফলে তাদের অনেক প্রশ্নের জবাব স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছ জানার থাকলেও অধিকাংশ সময় দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান কিংবা নানা কৌশলে এড়িয়ে যান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার আপাতত একাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমকে সামাল দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ডা. আয়েশা একজন সৎ, দায়িত্ববান ও গণমাধ্যম-সহায়ক হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক সময় তার কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বা অনেক নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তথ্য না থাকায় তিনি কথা বলতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সরাসরি মুখ না খুললেও সকলেই শক্তিশালী মিডিয়া উইং প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন, স্বাস্থ্য সেক্টরের ব্যাপক কর্মযজ্ঞে হাজার হাজার চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত। তাদের কারো কারো অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দায় সকলের ওপর বর্তাচ্ছে। এ নিয়ে তাদের মনে কষ্ট রয়েছে।