টঙ্গীর তুরাগতীরে ঢল নেমেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের। উত্তরা হাউজ এলাকা থেকে একমুখী সড়কে করা হয়েছে ডাইভারসন। যানবাহন থেকে হেঁটে মুসল্লিরা চলছেন তুরাগ তীরে। সবার ইজতেমা ময়দান। কারও মাথায়, কারও কাঁধে একাধিক ব্যাগ। স্থানীয় মুসল্লিদের হাতে জায়নামাজ।
কনকনে শীত উপেক্ষা করে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সকাল থেকেই ছুটছেন তাবলিগের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে।
আজ (শুক্রবার) কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এই পর্বে অংশ নিয়েছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা।
সওয়াব হাসিলের আশায় তাবলীগ জামাতের বড় এই আয়োজনে বিদেশের মুসল্লিরাও অংশ নিচ্ছেন।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক, মিনি ট্রাক, প্রাইভেটকার, বাস ও সিএনজি চড়ে তুরাগ তীরে নামছেন মুসল্লিরা। শীতের পোষাক, তাবু ও অতিরিক্ত খাবার নিয়ে আসছেন তারা।
সড়কে শুধু মানুষ আর মানুষ। তুরাগ তীরে যাওয়ার সড়কে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে যান চলাচল। সড়কজুড়ে দ্রুত গতিতে হেঁটে চলতে দেখা যায় মুসল্লিদের।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জুমার নামাজের পর দুই সড়কেই ফের চালু হবে যান চলাচল। মুসল্লির ঢল সামলে থানা বিভাগ পুলিশের সাথে কাজ করছে ট্রাফিক সদস্যরাও।
র্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যানজট এড়াতে এরই মধ্যে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
ইজতেমাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সাত স্তরে কাজ করবেন পুলিশের প্রায় ৮ হাজার সদস্য। পুরো ইজতেমার মাঠ ঘিরে সক্রিয় র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা।
পুলিশের নিজস্ব ১৬টি ওয়াচ টাওয়ারসহ র্যাবের নিজস্ব ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো ইজতেমা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ইজতেমা মাঠের চারপাশে রয়েছে অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশের হোন্ডা টিমসহ সাদা পোশাকের পুলিশও কাজ করছে। তুরাগ নদেরও কয়েক জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন পুলিশের সদস্যরা।
ইজতেমা ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা।
মমিনুল ইসলাম নামে এক মুসল্লি বলছেন, সওয়াবের আশায় জুমার নামাজে শরিক হতে তিনি ছুটছেন ইজতেমা ময়দানে। নামাজ শেষে দেশ-বিদেশের বরেণ্য আলেম ওলামাদের বয়ান শুনবেন। আমল-আকিদার শিক্ষা নেবেন।
মুসল্লি সবুজ মিয়া বলেন, ইজতেমা ময়দানে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের নাজাতের আশায় এসেছি। ইজতেমার মুরব্বিরা দ্বিন ও আখেরাতের নাজাতের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। ঈমান, আমল-আখলাকসহ ৬ উসুল নিয়ে আলোচনা হবে। দ্বিনের দাওয়াতের আলোচনা হবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এবার পুরো ইজতেমায় কাজ করছে জেলা প্রশাসনের ৩০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য ৩১টি ভবনে রয়েছে ৮ হাজার ৩৩১টি শৌচাগার। ১৭টি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে মুসল্লিদের। তিনটি গ্রিড থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ৪টি শক্তিশালী জেনারেটরও প্রস্তুত।
মুসল্লিদের পারাপারের জন্য ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর ৭টি ভাসমান সেতু প্রস্তুত করা হয়েছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১০টি বিশেষ ট্রেন চালু করা হবে এবং সব ট্রেনের টঙ্গী রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতি দেওয়ার কথা রয়েছে।
আর এবার পুরো ইজতেমাকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলার লোকজন খিত্তা অনুসারে বসার ব্যবস্থা করা।হয়েছে।
খিত্তাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান
আগত মুসল্লিরা যে সব খিত্তায় অবস্থান করছেন, তা হলো—গাজীপুর (খিত্তা-১), টঙ্গী (খিত্তা-২,৩ ও ৪), ঢাকা (খিত্তা-৫-১৯ ও ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯,৩২), রাজশাহী (খিত্তা-২০), নওগাঁ (খিত্তা-২১), নাটোর (খিত্তা-২২), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (খিত্তা-২৩), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৬), টাঙ্গাইল (খিত্তা-৩০), নড়াইল (খিত্তা-৩১), রংপুর (খিত্তা-৩৩), নীলফামারী (খিত্তা-৩৪), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৩৫), লালমনিরহাট (খিত্তা-৩৬), গাইবান্ধা (খিত্তা-৩৭), মুন্সিগঞ্জ (খিত্তা-৩৮), মাগুরা (খিত্তা-৩৯), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৪০), বগুড়া (খিত্তা-৪১), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা-৪২), ফরিদপুর (খিত্তা-৪৩), যশোর (খিত্তা-৪৪), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৪৫), বাগেরহাট (খিত্তা-৪৬), নরসিংদী (খিত্তা-৪৭), ভোলা (খিত্তা-৪৮), জামালপুর (খিত্তা-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৫০,৫১), মেহেরপুর (খিত্তা-৫২), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৫৩), নেত্রকোনা (খিত্তা-৫৪), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৫৫), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৫৬), বরিশাল (খিত্তা-৫৭), রাজবাড়ি (খিত্তা-৫৮), শেরপুর (খিত্তা-৫৯), শরীয়তপুর (খিত্তা-৬০), মাদারীপুর (খিত্তা-৬১), সিলেট (খিত্তা-৬২), কক্সবাজার (খিত্তা-৬৩), রাঙমাটি (খিত্তা-৬৪), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৬৫), বান্দরবান (খিত্তা-৬৬), ফেনী (খিত্তা-৬৭), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৮), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৯), চাঁদপুর (খিত্তা-৭০), বি. বাড়িয়া (খিত্তা-৭১), খুলনা (খিত্তা-৭২), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭৩), বরগুনা (খিত্তা-৭৪), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৭৫), কুমিল্লা (খিত্তা-৭৬), পিরোজপুর (খিত্তা-৭৭), ঝালকাঠি (খিত্তা-৭৮), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৭৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৮০), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৮১), পাবনা (খিত্তা-৮২), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৮৩), পঞ্চগড় (খিত্তা-৮৪), দিনাজপুর (খিত্তা-৮৫), জয়পুরহাট (খিত্তা-৮৬), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৮৭)।
তাছাড়া রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুরের খিত্তাগুলোর অবস্থান তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে। অন্যদিকে ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১ ও ১৫ (খ) নম্বর খিত্তাগুলো সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।