দেশে করোনা সংক্রমণের বিস্তার সর্বত্রই। শনাক্তের হারও বেশি। প্রতিদিন এ সংক্রান্ত তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু পরীক্ষা কম হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথায়ও কান দিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। সংস্থাটি বলেছে-টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট। দেশে ইতিমধ্যেই আক্রান্ত দুই লাখ ছাড়িয়েছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
সংক্রমণ পরিস্থিতি সামনে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এ অবস্থায় এলাকাভিত্তিক বড় পরিসরে লকডাউন দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটি। সর্বশেষ আসন্ন কোরবানির ঈদে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে পশুর হাট স্থাপন না করার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কিন্তু রাজধানীসহ উল্লিখিত জেলায় হাট বাসানোর প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ বিস্তার প্রতিরোধে ঈদের ছুটির সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য স্থানে যাতায়াত বন্ধও রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির দফায় দফায় সুপারিশ দিয়েছে নানা বিষয়ে। কিন্তু এসব সুপারিশ কমই আমলে নিয়েছে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। কমিটির কয়েকজন সদস্য তাদের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে হাট ইজরা দিতে এবং নিতে সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে চোখে পড়ার মতো। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সিদ্ধিরগঞ্জে ১০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টি ওয়ার্ডেই পশুর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে। অন্যদিকে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অগ্রাহ্য করেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় ১১টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবং ১৫ জুলাই অস্থায়ী হাটগুলোর জন্য দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সদর উপজেলা প্রশাসন। এরমধ্যে শুধু সদর থানার গোগনগর ইউনিয়নেই ৬টি হাট। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সাধারণদের মাঝে। তাদের মতে, একটি ইউনিয়নে এতোগুলো হাট বসলে বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটবে পশুর হাট ঘিরে। ফলে করোনার সংক্রমণ ছাড়ানোর আশংকা রয়েছে। এমনিতেই প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, রোববার (১৯ জুলাই) সকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৭৪১ জন। এরমধ্যে শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ২২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এবং মারা গেছে একজন। এনিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১২৪ জনে। সেখানে এতোগুলো হাট বসানোর উদ্যোগকে কোনভাবেই ভালোভাবে নিচ্ছেন না ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ।
৮নং গোগনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল বলেন, কোরবানীর হাট বসবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে একটি ইউনিয়নে ৬টি পশুর হাট বসানোর প্রক্রিয়াটাকে যুক্তিযুক্ত মনে করছি না এই সময়ে। একটি ইউনিয়নে এতোগুলো হাট বসলে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটবে। এতে করে গ্রামের মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। আমি বিষয়টি ভেবে দেখার মাননীয় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।