নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় শুক্রবার সকাল থেকে দেশের ১১টি জেলার আলেমী সূরার তাবলীগ জামাতের তিন চিল্লার সাথীদের নিয়ে ৩দিনের জোড় শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় ভারতের তাবলীগ জামাত আলেমী শূরা সমর্থিত মুরুব্বী মাওলানা আকবর শরীফের তারগীবি বয়ানের মধ্যে দিয়ে জোড় শুরু হয়। ফতুল্লার নয়ামাটি এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলা তাবলীগি মার্কাজ মসজিদে আয়োজিত এ জোড় চলবে আগামী রবিবার পর্যন্ত।
এদিকে তাবলীগের জোড়কে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে নারায়ণগঞ্জ পুুলিশ। পবপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সিসি ক্যামেরা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যসহ নিবীর পর্যবেক্ষণসহ মাঠে ১৩টি ওয়াচ টাওয়ার থেকে জোড় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছে পুলিশ।
জোড়ের মাঠে উদ্বোধনী বয়ানে মাওলানা আকবর শরীফ বলেন, শুধু বয়ান শুনলে চলবে না। আমল করতে হবে। সারা বিশ্বের মুসলমানরা হচ্ছে একটা দেহ। যেখানে এই দেহ কষ্ট পাবে সেই কষ্টে আমাদেরও কষ্ট পেতে হবে। এটাই হচ্ছে ইমান।
তিনি আরো বলেন, তাবলীগ জামাতের মেহনতটি হচ্ছে মানুষের দিলের পিছনে মেহনত। একটি মানুষ যেন আল্লাওয়ালা, ইমান ওয়ালা, দ্বীনদার পরহেজগার হতে পারে এটাই হচ্ছে তাবলীগের মেহনত। এই মেহনতের মূল উদ্দেশ্য হলো গুনাহ থেকে বাঁচা। নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করা। রসূল ও সাহাবীগণ যেভাবে মানুষের পেছনে দ্বীনে মেহনত করেছেন পুরোপুরি সেই মেহনতকে অুনসরণ করা। আল্লাহভোলা মানুষগুলোকে আল্লাহর দিকে ডাকা।
মাওলানা আকবর শরীফের হিন্দি ভাষায় বয়ানের বাংলায় অনুবাদ করেন কাকরাইল মার্কাজের আলেমী সূরা সমর্থিত সদস্য মাওলানা নূর রহমান।
মাঠের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ফতুল্লা মাসদাইরের বাসিন্দা বরগুনা চিল্লার জামাতের জিম্মাদার জাকির হোসেন মাসদাইরী জানান, দেশের ১১টি জেলা অর্থাৎ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা ও ঝালকাঠি জেলার ৩ চিল্লার কয়েক হাজার সাথীদের নিয়ে জোড় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে সাথীদের জন্য ৩২টি খিত্তা, ওজু করার স্থানসহ পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে মেডিকেল টিম, এ্যাম্বুলেন্স। শুক্রবার জোড়ের প্রথম দিন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জসহ পাশের জেলার বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এখানে এসে জুম্মার নামাজ আদায় করেছেন।
এদিকে জোড়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় আধা কিলোমিটার ফতুল্লা জালকুড়ি মার্কাজ মসজিদের পাশে এলাকার খালি জমিতে ১১ জেলা থেকে আগত জোড়ের সাথীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাজার হাজার মুসল্লী সেখানে অবস্থান নিয়েছেন।
মাঠ থেকে তাবলীগ জামাতের কর্মী ওয়াহিদ জানান, মাঠে বিপুল পরিমান তাবলীগের সাথীদের জন্য প্রায় ৬ শত অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। মটর বসিয়ে পানির লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব নিয়ন্ত্রনের জন্য আলাদা আলাদা জামাত বানানো হয়েছে। জামাতগুলো এগুলো নিয়ন্ত্রন করছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার জোড়ের মাঠে জুম্মার নামাজ আদায় শেষে তাবলীগ জুমাতের মুরুব্বীদের সাথে দুপুরের খাবার খেয়েছি। সহা¯্রাধিক পুলিশ জোড়ের মাঠে মোতায়েন রয়েছে। সিসি ক্যামেরা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারগণ যারা আছেন তারা আলাদা আলাদা নেতৃত্বে দিয়ে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরো জানান, গোয়েন্দা টিমমগুলো সাদা পোশাকে মাঠের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তায় কাজ করছে। মাঠে থাকা ওয়াচ টাওয়ার থেকে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত প্রতি বছর ইজতেমার পূর্বে এই জোড় অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনের এই জোড় মূলত যারা টানা ১২০ দিন তিন চিল্লা ও আলেমগণ এক সাল অর্থাৎ ১২ মাস টানা আল্লাহর রাস্তায় সময় দিয়েছেন তারাই এই জোড়ে অংশগ্রহণ করে থাকে। তবে জোড় উপলক্ষে এক চিল্লার সাথীরা ইচ্ছে করলে মাঠে গিয়ে অবস্থান করতে বা থাকতে পারে।