করোনা চিকিৎসার নামে নানা অনিয়মের দায়ে গ্রেফতার রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে বিপুল সংখ্যক অভিযোগ পাচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সাহেদের প্রতারণার তথ্য জানতে চালু করা র্যাবের নির্ধারিত সেলে দুই দিনে মোট ১৪০টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
এর মধ্যে ফোন কলের মাধ্যমে র্যাবের কাছে ১২০টি অভিযোগ এসেছে। বাকি ২০টি অভিযোগ এসেছে মেইলের মাধ্যমে, যার সবকটিই আর্থিক প্রতারণা সংক্রান্ত। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে সাহেদ করিম প্রায় ১০ কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
রেববার (১৯ জুলাই) র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
রিজেন্ট হাসপাতালে প্রতারণার দায়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে নিজের অপরাধ স্বীকার করেন তিনি। এরপর মামলার তদন্তকারী সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে সাহেদকে হস্তান্তর করা হয়। আদালতে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। এ অবস্থায় গত ১৭ জুলাই সাহেদের প্রতারণার তথ্য পেতে হটলাইন চালু করে র্যাব।
আশিক বিল্লাহ বলেন, আমরা গত ১৭ জুলাই একটি সেবা লাইন চালু করি। সেবালাইনের উদ্দেশ্য ছিলো, রিজেন্ট হাসপাতাল বা সাহেদের দ্বারা যারা প্রতারিত হয়েছেন তাদের আইনি পরামর্শ দেওয়া এবং বিভিন্ন রকম আইনি সহায়তা প্রদান করা। র্যাবের হটলাইন বা সেবালাইনটি চালুর পর আমরা সবার কাছে থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। এছাড়া, আমরা একটি অফিসিয়াল ইমেইল এড্রেস দিয়ে যারা প্রতারিত হয়েছেন, তাদের কাছ থেকে তথ্যের আহ্বান জানাই।
এর ফলশ্রুতিতে আমরা আজ (রোববার) পর্যন্ত ১২০টি ফোন কল এবং ২০টি ইমেইলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। মূলত সেই অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—সাহেদ চাকরি দেবেন বলে একটি বিশাল অঙ্কের টাকা অনেকের কাছ থেকে নিয়েছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বদলির জন্য সুপারিশ করবেন মর্মে টাকা নিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় বালু ভরাটের কাজ, রড, সিমেন্ট, বিটুমিন সাপ্লাইয়ের কাজের কথা বলেও টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
এর বাইরেও আরো বেশকিছু অভিযোগ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের দুই শাখা থেকে চিকিৎসার নামে অতিরিক্ত ফি আদায় করা, চিকিৎসা ব্যায়ের অনেক বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পেয়েছি। যেগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ সংক্রান্ত অভিযোগ। এর পাশাপাশি রিক্সা ভ্যান, ভুয়া লাইসেন্স সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য অভিযোগ পেয়েছি।
তিনি বলেন, অভিযোগের অন্যতম একটি অংশ বিদেশ থেকে আমাদের কাছে ফোন কলে এসেছে। বিদেশে যারা বাংলাদেশি আছেন তারা অনেকে কোন না কোনভাবে সাহেদ করিমের দ্বারা প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন মর্মে আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, একটি তথ্য আমরা পরিষ্কার করে জানাতে চাই, যে সব ফোন কল আমরা পেয়েছি সেসব ফোনকলের মূল বিষয়টি ছিলো অর্থ অর্থাৎ আর্থিক লেনদেন। আপাতত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সাহেদ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আনুমানিক ১০ কোটি টাকার মতো প্রতারণা করেছেন, এই মর্মে অভিযোগ পেয়েছি।
র্যাবের সেবামূলক হটলাইন আরো কিছুদিন চলমান থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাহেদ করিম বা রিজেন্ট হাসপাতাল সংক্রান্ত মামলার তদন্তভার নেওয়ার জন্য র্যাব ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে আবেদন করেছে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি অনুমোদন স্বাপেক্ষে র্যাব মামলাটির তদন্ত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।