১১ দাবি আদায়ে পঞ্চম দিনে গড়ালো নরসিংদীর জুটমিল শ্রমিকদের আমরণ অনশন। প্রচণ্ড শীত ও ঘণ কুয়াশা উপেক্ষা করে দাবি আদায়ে শ্রমিকরা এবার কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে মাঠে নেমেছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তাদের শিশু সন্তানরাও। টানা অনশনের কারণে অসুস্থও হয়ে পড়েছেন অনেকে শ্রমিক।
বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) পঞ্চম দিনে শ্রমিকদের এ আমরণ অনশনে মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে প্লাকার্ড নিয়ে যোগ দিয়েছে তাদের বৃদ্ধা বাবা-মাসহ স্কুল ড্রেস পড়ে তাদের সন্তানরাও।
এদিকে আন্দোলন একটানা পঞ্চম দিনে গড়ানোয় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। এর মধ্যে হারুনুর রশিদ ও দুলাল মিয়া নামে দুই শ্রমিককে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ক্রমান্নয়ে দুর্বল হয়ে পড়া শ্রমিকদের। এদিকে শ্রমিক আন্দোলনের ফলে মিলের সব ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম।
ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিক আওলাদ হোসেন বাংলা২৪ বিডি নিউজকে বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে থেকে গেছে। ন্যায্য পাওনা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। কাজ করে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে চাই। সন্তানদের মুখে দু-মোঠো অন্ন ও লেখাপড়া করাতে চাই। আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে, দেশের হাজার হাজার শ্রমিকদের সঙ্গে তাদের পরিবারও ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এবার আমরা কাফনের কাপড় গায়ে মাঠে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালবে।
নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নিশাত সুলতানা বাংলা২৪ বিডি নিউজকে বলেন, আমাদের ঘরে খাওয়ার মতো কোনো খাবার নেই। নতুন বছরে সবাই নতুন ক্লাসে উঠে আনন্দ থাকলেও আমাদের কোনো আনন্দ নাই। আন্দোলনের কারণে বাবা এখন বাড়িতেই যায় না। তাই আমরাও বাবাদের আন্দোলনে এসেছি। সরকার যেনো বাবাদের সব দাবি মেনে নেয়। বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই।
ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিক নেতা দেলোয়ার হোসেন বাংলা২৪ বিডি নিউজকে বলেন, বার বার আশ্বাস দিয়েও আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়ে শুধু সময় ক্ষেপণ করছেন। শ্রমিকদের কথা একবারও ভাবছেন না তারা। হাজার হাজার শ্রমিক ঘর-বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসে আন্দোলন করছি, সেদিকে তাদের কোনো নজরই নেই। আমরা অনতিবিলম্বে আমাদের ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এসময় ইউএমসি জুট মিলের সিবিএর সভাপতি শফিকুল ইসলাম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক কামাল মিয়া, কাউছার আহাম্মেদ, সুমন খন্দকার, জাকির হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, নন সিবিএ পরিষদের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান, মোশারফ হোসেন, কাউয়ুম প্রধান, শামসুল আরেফিন, ইসা হাবিব রিপন সরকারসহ ঐক্য পরিষদের নেতারাসহ সাধারণ শ্রমিকরা অনশনে উপস্থিত ছিলেন।
১১ দফা দাবি আদায়ে গত ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে বাংলাদেশ পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদ ডাকে ইউএমসি জুট মিলের শ্রমিকরা মিল গেটের সামনে এ আমরন অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। অনশনে ইউনাইটেড-মেঘনা-চাঁদপুর (ইউএমসি) জুট মিলের স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক রয়েছেন।
এর আগেও ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরণ আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। টানা পাঁচদিন আন্দোলনের পর আলোচনার জন্য কর্মসূচি স্থগিত করে কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা।